অচেনা চেনা

বন্ধুত্ব নাকি ছলনা (নভেম্বর ২০২৩)

বিশ্বরঞ্জন দত্তগুপ্ত
মোট ভোট ২২ প্রাপ্ত পয়েন্ট ৪.৭
  • ১৪
  • 0
  • ৮৯
জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষের দিককার সময় । প্রচন্ড গরম । আকাশে বিন্দু মাত্র বৃষ্টির মেঘের দেখা নেই । চারিদিকে একটা গুমোট থমথমে ভাব । আবার এদিকে গ্রামের লোকেদের চোখেও ভাল ভাবে ঘুম নেই । সবার মনের ভিতরে একটা গভীর চিন্তার ছাপ । সারাটা গ্রামে একটা ঘুমোট আবহাওয়া । কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে -- গ্রামে নাকি আর থাকা যাবে না। দেশটা নাকি ভাগ হয়ে যাবে ! এই প্রিয় গ্রাম , জমিজমা , এতদিনের পূর্বপুরুষদের স্মৃতি বিজড়িত ঘর-বাড়ী ছেড়ে নাকি চলে যেতে হবে । কিন্তু কোথায় যাবে , কোথায় থাকবে , কি ভাবে সংসার চলবে , সেটা কেউ জানে না । একটা অজানা আতঙ্কে দিনগুলো কাটছে । আজ গ্রামের শনি মন্দিরের সামনের মাঠে এই নিয়েই জরুরী এক আলোচনা সভা হলো । কেউ কেউ বললেন -- এগুলি সব গুজব , আমরা আমাদের গ্রামেই থাকব , আমাদের কোথায় এই ভিটে ছেড়ে চলে যেতে হবে না। আবার কিছু লোক বললেন -- তাঁরা নাকি শুনে এসেছে , তাঁদের গ্রামের কয়েকটা গ্রাম পরে যে গ্রামটা আছে , সেখানকার লোকজন প্রায় তৈরী হয়েই রয়েছে তাঁদের গ্রাম ছেড়ে চলে যাবার জন্য কারন দেশ নাকি ভাগ হচ্ছেই । গ্রামের হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বেশ চিন্তিত ভাবে বললেন -- দেখুন , বিভিন্ন পত্র পত্রিকার খবর আর বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এটা বোঝা যাচ্ছে , দেশটা হয়তো সত্যি সত্যি ভাগ হয়ে যাবে।

অবশেষে একদিন সত্যি সত্যি এলো সেই চরম দুঃখের দিন । দেশটা ভাগ হয়ে গেলো । এর ফলে হাজারে হাজারে মানুষজন  , ঘরবাড়ী , জমিজমা ছেড়ে পশ্চিম বাংলায় শরণার্থী হয়ে প্রবেশ করলো । জমি হারিয়ে , পূর্ব পুরুষের ভিটে হারিয়ে , সহায় সম্বলহীন হয়ে জমিদার থেকে গরিবলোক , বড়লোক থেকে অতি সাধারন লোক স্ত্রী , পুত্ৰ , কন্যার হাত ধরে ভারতবর্ষে এসে প্রবেশ করলো । যে যা পারলো তাঁদের শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় জিনিসগুলিকে কোন রকমে বেঁধেছেদে সঙ্গে নিয়ে তাদের প্রিয় , আদরের গ্রামকে ছেড়ে এক অজানার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরলো । কোথায় যাবে , কোথায় থাকবে কিছুই জানে না । শুধুই মানুষদের ভীড় গ্রামগুলি থেকে চলে যাবার । কেউবা যাচ্ছে কলকাতার দিকে আবার কেউ অন্য কোন জায়গায় । ট্রেনে , বাসে কোথাও জায়গা নেই । জীবন হাতে করে প্রয়োজনীয় মালপত্র নিয়ে সবাই বেড়িয়ে পরেছে । সরকার পরিবারের অসুস্থ গোপাল সরকার তাঁর স্ত্রী যোগমায়া আর তাদের একমাত্র অল্পবয়সী সুন্দরী কন্যা তানিয়াকে নিয়ে অনেক কষ্টে ট্রেনে উঠেছেন কলকাতা যাবার জন্য । ট্রেনের কামড়াগুলিতে একেবারে তিল ধরার জায়গা নেই । একই রকম অবস্থা ট্রেনের কামড়াগুলির ছাদে । সেখানেও মানুষজন গাদাগাদি করে বসে রয়েছেন তাঁদের ঘটিবাটি আগলে ধরে। গোপাল সরকার  শুনেছেন , কলকাতায় শিয়ালদহ স্টেশন থেকে সোদপুরের দিকে যেতে রেল লাইনের পাশে একটা ফাঁকা জলা মাঠে তাঁদের গ্রামের কিছু পরিবার সেখানে থাকছেন। আপাতত গোপাল সরকার পরিবার নিয়ে সেখানেই যাচ্ছেন । 

জায়গাটা শিয়ালদহ আর সোদপুর স্টেশনের মাঝখানে রেল লাইনের ধারে বড় একটা জলা মাঠে । চারিদিকে নোংরা আর দুর্গন্ধ । মাঝে মাঝে কালো দৈত্যের মত কয়লা ইঞ্জিনের রেলগাড়ী কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে গাড়ী ভর্তি করে শরণার্থীর ঢলকে এই কলকাতা শহরে ঢেলে দিয়ে যাচ্ছে । যার যেরকম সম্বল , সেই অনুযায়ী বেড়া , হোগলা পাতা , প্লাস্টিক সিট আর বাঁশের খুঁটি গেড়ে মোটামুটি থাকবার জন্য একটা ঘরের মত করে নিয়েছে । এই বড় মাঠটাতে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ ঘর পরিবার গাদাগাদি করে রয়েছে । এযেন এক অন্য জীবন । বিভিন্ন জায়গায় তৈরি হয়েছে রিফিউজি ক্যাম্প । সেখানে উদ্বাস্তুরা থালা - বাটি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন । সরকারি তরফে দয়া করে কিছু চাল - ডাল দেওয়া হতো । সেটাই ছিল তাঁদের সারাদিনের খোরাক । সব মানুষের তখন প্রায় ভিখারির দশা । সবাই এখন যে যার ধান্দায় ব্যস্ত । কি ভাবে রোজগার করা যায় সেটাই তাঁদের একমাত্র চিন্তা । গ্রামে থাকাকালীন প্রত্যেক পরিবারের মধ্যে যে ভালবাসা , আন্তরিকতা , বন্ধুত্ব ছিল , সেটা আর একদম এখানে নেই বললেই চলে । সবাই যে যার স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত । শুধু অনিশ্চিয়তা আর অভাবের মধ্যে এ এক নূতন জীবনের মধ্যে দিয়ে পথ চলা । 

গোপাল সরকারের কয়েকদিন ধরে খুব জ্বর । কোন ওষুধে জ্বর আর কমছে না । বিশেষ করে জ্বরটা আসে রাত্রিবেলায় । রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে ডাক্তার বললেন -- এটা এক মারাত্মক ধরনের ম্যালেরিয়া । ভাল চিকিৎসার প্রয়োজন । ভালোভাবে চিকিৎসা করবার মতো পয়সা-কড়িও হাতে নেই। এইভাবে চলতে চলতে এক ঝড় জলের রাতে প্রায় বিনা চিকিৎসায় তাঁর পরিবারটিকে এক নিঃস্ব অবস্থায় রেখে তিঁনি মারা গেলেন। শুরু হলো বেচেঁ থাকার এক কঠিন সংগ্রাম। চারিদিকে খারাপ লোকদের লোলুপ দৃষ্টি , কুৎসিত ইঙ্গিত , এগুলি উপেক্ষা করে ভোর হতেই অন্য লোকজনের মত যোগমায়াকে কিংবা তানিয়াকে বাটি হাতে রিফিউজি ক্যাম্পে গিয়ে লাইনে দাড়াতে হয় সরকার থেকে চাল , ডাল পাবার জন্য। এই রকম দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে হটাৎ করেই একদিন তাদের পরিবারের সঙ্গে পরিচয় হোল সোমনাথ সেনের।

সোমনাথ সেন তানিয়ার বাবার বয়সি , বর্তমানে এখানকার রিফিউজি ক্যাম্পের কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন আর সেই সুত্রেই যোগমায়া আর তানিয়ার সঙ্গে তাঁর পরিচয়। এছাড়া বিভিন্ন সেবা মূলক কাজের সঙ্গেও তিঁনি জড়িত। কথাবার্তায় আর ব্যবহারে অত্যন্ত ভদ্র , মার্জিত এক অমায়িক ভদ্রলোক। কয়েক পুরুষ ধরে তাঁরা কলকাতার বাসিন্দা। নিজের পরিবার বলতে তিঁনি একাই। মানুষের জন্যে বিভিন্ন ধরনের সেবার কাজ করবার ফলে তাঁকে বিভিন্ন সময় , বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। বেশ কয়েকদিন কথাবার্তা , মেলামেশার পর যোগমায়া , তানিয়া অনুমান করতে পেরেছে সোমনাথ সেন লোকটি খারাপ নয়। তানিয়া তাঁকে " কাকু " বলে ডাকে আর নিজের বাবার মতোই শ্রদ্ধা করে। আপদে - বিপদে তিঁনি সবসময় তাদের পাশে থাকেন। যোগমায়া মাঝে মাঝে লক্ষ্য করেন সোমনাথ সেন অন্যমনস্ক হয়ে কিছু একটা ভাবেন আবার কখনো চোখের জল মোছেন। জিজ্ঞেস করলে বলেন - না , না ,  কিছু নয়। পরিবেশকে হালকা করে হেসে বলেন - আমি আপনাকে আমার দিদির মতো দেখি , শ্রদ্ধা করি আর তানিয়া তো আমার সন্তানের মতো। আপনারা এই কলকাতায় একেবারে নতুন , কোনো কিছু অসুবিধা হলে আমাকে বলবেন।

সময় থেমে থাকে না , এগিয়ে চলে। প্রায় একবছর হতে চললো যোগমায়া আর তাঁর মেয়ে এই নতুন গজিয়ে ওঠা কলোনিতে কোনরকমে বসবাস করছে। সোমনাথ সেনের সহাহতায় যোগমায়া দেবী কাছেই একটা দোকানে মেয়েদের জামা - কাপড় সেলাইয়ের কাজ করে সামান্য কিছু উপার্জন করেন আর তানিয়া এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাকতা করে। এই রকম এক কঠিন পরিস্থিতিতে সোমনাথ সেনের মতন লোকের সাহায্য না পেলে এতদিনে হয়ত মানুষরুপি হায়না , নেকড়ের দল তাদেরকে ছিঁড়ে খেয়ে নিত। এক ছুটির দিন দুপুর বেলা যোগমায়াদের ছেড়ে আসা গ্রামের বয়স্ক রমলাদি এসেছেন, গল্প করতে। রমলাদিরাও এই কলোনিতেই থাকেন। গল্প করতে করতে হটাৎ করে বললেন - যোগমায়া , তোদের পরিবারে কলকাতার নতুন বন্ধু ওই সোমনাথকে নিয়ে সারা কলোনি জুড়ে নানা ধরনের যে কুৎসিত আলোচনা চলছে সেটা আর শোনা যাচ্ছে না। অবশ্য এটা তোদের ব্যাপার , আমি নাক গলাতে চাই না। তোকে আমি স্নেহ করি , তাই সাবধান করে দিচ্ছি এই কয়েকদিনের চেনা কলকাতার লোকদের সঙ্গে এতো মেলামেশা করিস না বিশেষ করে তোর অল্পবয়সি সুন্দরী মেয়েটার কথা চিন্তা করে। যখন এরা সুযোগ বুঝে তোদেরকে বিপদে ফেলে দেবে তখন এই রমলাদির কথার মর্ম বুঝতে পারবি। 

কিছুদিন যাবত তানিয়া খুব অসুস্থ। এই কলোনির এক হাতুড়ে ডাক্তারের ভুল ওষুধ খেয়ে সুস্থ হওয়ার বদলে আরো বেশি করে অসুস্থ হয়ে পরেছে। ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে হাঁটা চলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। সোমনাথ সেন বর্তমানে কিছুদিন যাবৎ কলকাতায় নেই। সেবার কাজ নিয়ে বাইরে গেছে , আজ রাতে ফেরার কথা। যোগমায়া একেবারে দিশেহারা। কলকাতায় কোথায় ভাল ডাক্তার , হাসপাতাল কিছুই তার জানা নেই। এই বিপদে কলোনির লোকজনদের বলা সত্ত্বেও তাদের কোনো দেখা মেলে নি , উল্টে সাহায্য করার বদলে নানা ধরনের টিপুন্নি মূলক কথাবার্তা বলে চলেছে। 

ভোর হতেই সোমনাথ সেন হাজির হয়ে যোগমায়া দেবীকে বললেন - দিদি , আপনি একদম চিন্তা করবেন না । আমি গতকাল রাতে ফিরে তানিয়ার সব খবর পেয়েছি আর গতকাল রাতেই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমার চেনাশুনা বড় ডাক্তার দেখাবার সব ব্যবস্থা করে রেখেছি। এখুনি গাড়ি আসছে ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমার উপরে ভরসা রাখুন আর আপনি নিশ্চিন্তে ঘরে থাকুন আমি থাকতে তানিয়ার চিকিৎসার কোন ত্রুটি হবে না। তানিয়াকে গাড়িতে করে সোমনাথ সেন হাসপাতালে নিয়ে গেল। 

সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো , বিকেল হোল কিন্তু তানিয়ার কিংবা সোমনাথ সেনের কোন খবর নেই। খবরটা জানাজানি হতে কলোনির লোকজন , রমলা দি , কলোনির মাতব্বর রাখাল মন্ডল সবাই যোগমায়ার ঘরের সামনে জড়ো হয়েছে। সবার একটাই প্রশ্ন - এতক্ষন হয়ে গেল , মেয়েটার কোন খবর নেই ? মেয়েটা কি ভ্যানিশ হয়ে গেল ? রমলাদি চিৎকার করে বললেন - যোগমায়া , আমি তোকে পই পই করে সাবধান করে দিয়েছিলাম এই অচেনা , অজানা কলকাতার লোকদের সঙ্গে বেশি মেলামেশা না করতে। এবার আমার কথাটাই সত্যি হলো তো ! দেখ , তোর অল্পবয়সি সুন্দরী মেয়েটাকে তোর পছন্দের সোমনাথদা বিক্রি করে কোথাও চালান করে দিয়েছ কিনা !!!  সবার থেকে নানা ধরনের মন্তব্য শুনে যোগমায়া তানিয়ার কথা ভেবে বেশ চিন্তায় পরে গেলেন , তবে কি তাঁর মানুষ চিনতে ভুল হোল !! যোগমায়া শুধু ধীরে ধীরে সবার উদ্দেশে বললেন - আমিতো তানিয়ার শরীর খারাপের কথা আশেপাশের সবাইকেই জানিয়ে ছিলাম। কলোনির মাতব্বর রাখাল মন্ডল বেশ উত্তেজিত হয়ে বললেন - আমি শুনলাম , সেই ভোরবেলায় সোমনাথ সেন বলে কে একজন লোক অসুস্থ মেয়েটাকে ডাক্তার দেখাবার নাম করে হাসপাতালে নিয়ে গেল অথচ এখন অবধি তাদের কোন খবর নেই। মেয়েটাকে দীর্ঘ সময় ধরে পাওয়া যাচ্ছে না , এরতো একটা বিহিত হওয়া প্রয়োজন। চলুন , আমরা আর দেরি না করে এখুনি থানায় গিয়ে সমস্ত ঘটনাটা জানিয়ে আসি।

সন্ধ্যে ৭টা নাগাত পুলিশের ভ্যানটা কলোনির সামনে এসে দাঁড়াতেই , খবরটা দাবানলের মত ছড়িয়ে পরলো। রমলাদি , রাখাল মন্ডল আর সবার একটাই প্রশ্ন - মেয়েটার খোঁজ পাওয়া গেল ? আর ওই শয়তান সোমনাথ সেনকে অ্যারেস্ট করা গেছে ? পুলিশ অফিসার বললেন - আমরা সমস্ত তদন্ত করেই এখানে এসেছি। আপনাদের এই কলোনির মেয়ে তানিয়া বর্তমানে হাসপাতালে রয়েছ। এখন অনেকটাই সুস্থ আর বিপদমুক্ত বাকিটা হাসপাতালের ডাক্তারের থেকেই শুনতে পাবেন। পুলিশ অফিসারটি তানিয়ার মা যোগমায়া দেবী , রমলা দেবী আর রাখাল মন্ডলকে অনুরোধ করে বললেন - আপনারা পুলিশের ভ্যানে গিয়ে বসুন। আমরাই আপনাদেরকে হাসপাতালে পৌঁছে দিচ্ছি আপনাদের মেয়েটিকে দেখবার জন্য। আর অন্যদের বললেন - আপনারা ইচ্ছে করলে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে আসুন। একটা কথা আপনাদের জানাই -  সোমনাথ সেনের ব্যপারেও আমাদের তদন্ত করা হয়ে গেছে। থানায় এসে তার সম্পর্কে সমস্ত কিছু জেনে নিতে পারবেন।  

হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তারদের থেকে জানা গেল প্রকৃত ঘটনা । হাসপাতালের ডাক্তার তানিয়াকে ভাল ভাবে পরীক্ষা করে দেখেন কলোনির হাতুড়ে ডাক্তারের ভুল ওষুধ খেয়েই সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পরে। এই অবস্থায় শরীরে রক্ত দেবার খুব প্রয়োজন । তানিয়ার রক্তের গ্রুপ সবসময় পাওয়া যায় না। তানিয়াকে সুস্থ করবার জন্য সোমনাথ সেন পাগলের মত চারিদিকে রক্তের খোঁজ করতে থাকেন কিন্তু কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না। ভগবানের এমনি আশীর্বাদ সোমনাথ সেনের রক্তের গ্রুপ তানিয়ার গ্রুপের সঙ্গে মিলে যায়। ওনার রক্ত সরাসরি তানিয়াকে দেয়া হয়। তানিয়া ক্রমে বিপদ কাটিয়ে সুস্থ হতে থাকে আর সোমনাথ সেন এই বয়সে এত খানি রক্ত দেবার ফলে অসুস্থ হয়ে পরেন। বর্তমানে তিঁনিও এই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন , এখন তাঁর ওঠানামা বারন কিন্তু সুস্থ আছেন । আর একটা খবর কলোনির লোকজন এমনকি যোগমায়া দেবী কিংবা তানিয়াও জানত না। পুলিশের থেকে জানা গেল সোমনাথ সেন কলকাতায় খুবই বড়োলোক বাড়ির সন্তান আর উত্তরাধিকার সূত্রে প্রচুর সম্পত্তির মালিক আর তিঁনি বিবাহিত। তাদের সুখের সংসারে ঘোটে গেল এক ভয়ঙ্কর ঘটনা। বছর দুয়েক আগে পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে এক ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনায় তার স্ত্রী আর মেয়ে মারা যায়। এরপরে তিঁনি মানসিক ভাবে ভীষণ ভেঙ্গে পরেন। মর্মান্তিক ঘটনাটি ভুলে থাকবার জন্য নিজের জীবনটাকে মানুষজনের সেবার কাজে ব্যস্ত রাখেন। প্রথম তিঁনি যখন তানিয়াকে দেখেন , তখন তাঁর নিজের মেয়ের কথা মনে পড়েছিল। তানিয়াকে দেখতে আর চালচলন অনেকটাই তাঁর নিজের মেয়ের মত। মুখে কিছু না বললেও মনের দিক থেকে তানিয়াকে তিনি তাঁর নিজের মেয়ের মতই ভালবেসে ফেলেন। আর তানিয়ার মাকে নিজের দিদির মতই শ্রদ্ধা করেন। 

একটা সময় সোমনাথ সেন তানিয়াকে হাসপাতাল থেকে পুরোপুরি সুস্থ করে যখন বাড়িতে নিয়ে আসেন তখন কলোনির লোকজন বিশেষ করে রাখাল মন্ডল , রমলাদি সোমনাথ সেনকে হাতজোড় করে বলেন - আপনাকে আমরা সবাই অনেক কটু কথা শুনিয়েছি , গালাগাল করে মিথ্যে অপবাদ দিয়েছি। আপনার মতো পরোপকারি প্রকৃত বন্ধুকে চিনতে পারি নি। আপনি আমাদের ক্ষমা করে দেবেন। আসলে কি জানেন , দেশটা ভাগ হয়ে যাবার পর সবকিছু হারিয়ে সহায় , সম্বলহীন হয়ে আমরা বর্তমানে বেশ কষ্টের জীবনের মধ্যে রয়েছি আর এই সুযোগে কিছু সার্থপর লোকজন বন্ধুত্বের মুখোশ পরে আমাদের সঙ্গে মেলামেশা করে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি আর ভালো ভালো কথা বলে আরো বিপদের পথে ঠেলে দিচ্ছে। তাই কোনো লোক বন্ধুত্বের হাত বাড়ালে মনে হয় এর পিছনে হয়তো কোনো উদ্দেশ্য কিংবা ছলনার অভিসন্ধি রয়েছে। কিন্তু আপনাকে দেখে সেই ভুল আমাদের ভেঙেছে। এখনো আপনাদের মতন প্রকৃত বন্ধু , ভাল মানুষ এই সমাজে রয়েছ। আপনি আজ থেকে শুধুমাত্র যোগমায়াদির পরিবারেরই বন্ধু নন , পুরো কলোনির লোকজনের বন্ধু। আমরা সবাই আপনাকে প্রণাম জানাই। 
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
m mahadi আপনার কাছে একটা প্রশ্ন ছিলো !!!
m mahadi শ্রদ্ধেও
অথই মিষ্টি অভিনন্দন ....স্ব-শ্রদ্ধেও
Faisal Bipu অভিনন্দন শ্রদ্ধেয় দাদা
Jamal Uddin Ahmed অভিনন্দন।
বিষণ্ন সুমন সোমনাথ সেন এর মত মানুষগুলোকে সবাই ভুল বুঝে। এটাই বাস্তবতা। খুব সুন্দর লিখেছেন।
ভাই - অনেক ধন্যবাদ। সবসময় ভালো থাকুন।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

আজকের সমাজে একজন প্রকৃত বন্ধুকে নিয়ে এই গল্পটি লেখা।

১২ আগষ্ট - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ৪৭ টি

সমন্বিত স্কোর

৪.৭

বিচারক স্কোরঃ ২.৫ / ৭.০ পাঠক স্কোরঃ ২.২ / ৩.০

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪